স্বদেশ ডেস্ক: ছেলে এরিককে দেখার কথা বলে প্রয়াত এরশাদের বাসায় ঢুকলেও আর বের হচ্ছেন না বিদিশা (প্রয়াত এরশাদের তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রী)। এতে করে অস্বস্তিতে পড়েছে এরশাদ পরিবার। এরিককে দেখার কথা বলে প্রয়াত এরশাদের বাসায় ঢুকলেও বের হচ্ছেন না বিদিশা। সেখানে তিনি গত দুই রাত ধরে অবস্থান করছেন। আর এতেই অস্বস্তি বেড়েছে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে। না পারছেন তাকে বের করে দিতে আবার না পারছেন মেনে নিতে। আপাত:দৃষ্টিতে ছেলে এরিকের কাছে মা আসাতে বাঁধা দেওয়াটা অনেকটা অমানবিক মনে করা হচ্ছে। আবার এরশাদ যাকে বাসা থেকে বের করে দিয়েছেন তার অবস্থানও ভালোভাবে দেখছেন না পরিবারের লোকজন। আবার বিদিশা বাসায় ঢুকেই ক্ষ্যন্ত হননি। তার নিজের কিছু লোকজনকে বাসায় ঢুকানোর চেষ্টা করছেন। এটাতে সন্দেহের চোখে দেখছেন এরশাদ পরিবারের লোকজন। তারা এতে বিদিশার দুরভিসন্ধি হিসেবে দেখছেন। যে কারণে অন্যদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। কিন্তু এখানেও নতুন চাল খেলেছেন বিদিশা। সে নিজেকে অবরুদ্ধ দাবি করে মিডিয়ায় প্রচার করে যাচ্ছেন। খবর দিয়ে কিছু মিডিয়া কর্মীকেও ডেকে এনেছিলেন। কিন্তু প্রশাসনের লোকজনের বাঁধায় আটকে যায় তাদের প্রবেশও। বাসার নিরাপত্তা কর্মীরা বলেছেন, এরশাদ পরিবারের বাইরে কেউ যাতে বাসায় প্রবেশ করতে না পারে তেমন নির্দেশনা রয়েছে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে। এরশাদ জীবিত থাকা অবস্থা থেকে পুলিশি নিরাপত্তা ছিল প্রেসিডেন্ট পার্কে। ভিআইপি প্রটোকল পেয়ে এসেছেন। আবার বিদায়ী সংসদে মন্ত্রীর মর্যাদা এবং বর্তমান সংসদে বিরোধদলীয় নেতা থাকায় পুলিশ প্রটেকশন পেয়ে এসেছেন। এরশাদের মৃত্যূর পর আবেদন করে পুলিশি নিরাপত্তা বহাল রাখা হয়েছে। এখন প্রতি শিফটে ৫ জন করে পোশাকধারী পুলিশ ডিউটি পালন করে। সবচেয়ে বড় জটিলতা রয়েছে এরিকের অটিজম নিয়ে। সে কখন কাকে কি বলে তার কোনো ঠিক ঠিকানা নেই। এখন কি করতে গেলে কি হয় তা নিয়েও দেখা দিয়েছে উভয় সংকট।
এরশাদ পরিবারের লোকজন মনে করছেন, মূলত প্রয়াত এরশাদের বিপুল পরিমাণ সম্পদ দখল নেওয়ার জন্য এতো সব উদ্যোগ। এ কারণে ছেলেকে হাতে নিতে চায় বিদিশা। যদিও ছেলে এরিক তাকে খুব একটা পছন্দ করেন না। এমনকি মাকে মা না বলে অনেক সময় ‘ওই মহিলা’ বলতে শুনেছেন অনেকে। ছেলে মাকে পছন্দ করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এরিক কেনো মাকে পছন্দ করেন না এমন প্রশ্ন ছিলো এরশাদের একাধিক ব্যক্তিগত স্টাফের কাছে। তারা জানিয়েছেন, প্রয়াত এরশাদ ছেলে এরিককে আদর সোহাগ দিয়ে মানুষ করেছেন। কখনই তাকে শাসন করেন নি। কিন্তু কোর্টের আদেশ অনুযায়ী সপ্তাহে একদিন মায়ের বাসায় যেতে এরিক। তখন মায়ের নানা রকম বিধিনিষেধ এবং শাসন এরিক পছন্দ করতো না। সেখান থেকে হয়তো মায়ের প্রতি এক ধরনের বিরাগ তৈরি হয়ে থাকতে পারে।
বিদিশা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অনেক পোস্টে বলেছেন, আমি সম্পদ চাই না, সন্তানকে চাই। আমি মা বেঁচে থাকতে ছেলে কেনো চাচার নিয়ন্ত্রণে থাকবে। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য বিদিশার ফোন নম্বরে কল দিলে রিসিভ করেন নি। এসএমএস দিলে পরে কথা বলতে চেয়েছেন। বিদিশা মিডিয়াকে বলেছেন, আমার অটিস্টিক সন্তান এরিক। তাকে নিয়ে নোংরা রাজনীতি করবেন না। বাবা মারা যাওয়ার পর আমিই লিগ্যাল অভিভাবক। তাকে এবং তার ছেলে এরিককে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন বিদিশা। জাতীয় পার্টির বনানী কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠান শেষে জিএম কাদেরকে প্রশ্ন করা হয়েছিল বিদিশার অভিযোগ প্রসঙ্গে। জিএম কাদের কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বলেছেন, আমরা পরে বিফ্রিং করে সার্বিক অবস্থা মিডিয়াকে অবহিত করবো। তবে ছেলে এরিককে পেলেই কি এরশাদের বাড়ি, গাড়ি, ব্যবসা, স্থাবর অস্থাবরের নিয়ন্ত্রণ পাবেন বিদিশা। সেই সুযোগ খুবই সীমিত। এরশাদ তার সকল স্থাবর অস্থাবর হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ট্রাস্টের নামে দিয়ে গেছেন। সেখানে ট্রাস্টি হিসেবে যারা রয়েছেন তাদের সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার সুযোগ খুব একটা নেই। এরশাদের মৃত্যূর পর সেখানে চেয়ারম্যান হয়েছেন জিএম কাদের। এই ট্রাস্টের ব্যয়ের ক্ষেত্র বলা হয়েছে এরিকের ভরণ পোষণ। এরপর উদ্বৃত্ত থাকলে জনহিতকর কাজে ব্যবহার করা যাবে। তবে কোনভাবেই কোন সম্পদ হস্তান্তর বা বিক্রি করার সুযোগ নেই। এমনকি ট্রাস্টে অপর সন্তান সাদ এরশাদ কিংবা স্ত্রী রওশনের কোনো স্বত্ব কিংবা অধিকার রাখেন নি।